Posts

Showing posts from September, 2019

প্যালিনড্রোম​ ৫

১. ও মিতু, বাড়ি ছাড়িবা তুমিও? "তুমি মিতু?" - এটি অনেক আগে থেকেই জানা, সম্ভবত দাদাঠাকুরের আবিষ্কার; হাল-আমলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কবি ফরিদউদ্দিন তাঁর ' কথা থাক ' শীর্ষক সমানুলোমবিলোম-পঙ্ক্তিবিশিষ্ট কবিতার সংকলনেও 'তুমি'-'মিতু' ব্যবহার করেছেন।  ২. করক লহ, মরালবর্ণ বলরাম হলকরক! এটি এ-বছরের রথযাত্রা উপলক্ষে রচিত।   ব্যাখ্যা: 'মরাল'(অর্থাৎ রাজহংস)-ও শুভ্রবর্ণ, বলরামও শুভ্রবর্ণ -- তাই বলরাম 'মরালবর্ণ' (বিষ্ণু বা কৃষ্ণকেও তো মেঘবর্ণ বলে)। বলরামের প্রিয় অস্ত্র 'হল' বা লাঙ্গল -- যার মনে অন্য কিছু আছে সে যদি 'অন্যমনস্ক' হয়, তাহলে যাঁর 'কর'-এ অর্থাৎ হাতে হল থাকে, তাঁকে 'হ লকরক' কেন বলা যাবে না (তাঁর হলধর, হলপাণি, হলায়ুধ প্রভৃতি নাম অভিধানেই পাওয়া যাবে)? আবার 'করক' শব্দের বহু অর্থের অন্যতম হল নারকোলের মালা, বিশেষত পানপাত্ররূপে ব্যবহৃত নারকোলের মালা। বলরামের সুরাসক্তির কথা অনেকেই জানেন, তাঁকে নারকোলের মালায় তাঁর প্রিয় পানীয় উৎসর্গ করা যেতেই পার। এই বাক্যে শ্বেতবর্ণ, হলধর, 'বড়প্রভু' বলভদ্র...

প্যালিনড্রোম​ ৪

১. নূতন বরফে ছেয়ে গিয়েছে ফের বনতনূ। 'দেহ' অর্থে 'তনু', 'তনূ' দুটিই হয়। বন এখানে মানবরূপে কল্পিত, যার দেহ সদ্যঃপতিত তুষারে পুনরায় সমাচ্ছন্ন হয়েছে। ২. কবে ল' তাহার মেয়ে বয়েমের হাতা লবেক?   এক সেকেলে মহিলার আরেক মহিলাকে করা প্রশ্ন -- তাই সম্বোধনে 'ল'' ব্যবহৃত হয়েছে, আর 'নেবে'-র জায়গায় 'লবেক'। ৩.১. লইড়া ছা রোগের গেরো ছাড়াইল। 'লইড়া' 'লড়িয়া'-র আঞ্চলিক রূপভেদ, 'ছা' মানে পুত্র, আর 'গেরো' শব্দের এক অর্থ 'গিঁট' (এই গেরো এসেছে ফারসি ' গিরহ্ ' থেকে), অন্য অর্থ 'বিপদ' (এই গেরোর উৎস সংস্কৃত 'গ্রহ' বলে মনে করা হয়) -- এই দুই অর্থ এখানে মিলেমিশে গেছে। কোন ব্যক্তি জানাচ্ছেন যে, তাঁর ডাক্তার-পুত্র বহু সংগ্রাম ও পরিশ্রমের পর কোন এক ভয়াবহ, জটিল ব্যাধির কবল থেকে এক বা একাধিক রোগীকে মুক্ত করেছেন। পুনশ্চ: অনেকে হয়ত বলবেন, যেহেতু 'লইড়া'-র 'লই'-টাকে ভেঙে-ভেঙে 'লো-ই' এভাবে উচ্চারণ করা হয় না, 'লৈ' - এইভাবে যৌগিকস্বর (diphthong) দিয়েই উচ্চারণ করা...

প্যালিনড্রোম​ ৩

১. হেলে গেলে হে?  ২. সীমা গাছে আছে গা, মাসী?  গেছো মেয়ে সীমার মাসতুতো বোন প্রতিমা বহুদিন পর মাসির বাড়ি এসে তাকে দেখতে না পেয়ে নিজের মাসিকে (অর্থাৎ সীমার মাকে) কি এই প্রশ্ন করতে পারে না? ৩. গাবগাছে আছে গা বগা? জোছনামতী নদী শুকিয়ে যাওয়ার পর থেকে ছাতিমডাঙা গ্রামে বকের দেখা আর প্রায় পাওয়াই যায় না। কিন্তু আজ হঠাৎ একটা ধবধবে সাদা বক কোথা থেকে যেন পথ ভুলে খুকুদের ছোট্ট পুকুরটার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে পাড়ের গাছগুলোর একটাতে বসল। বক দেখে  খুকুর   সে কি আনন্দ! তার সঙ্গে তখন  ছিলেন শুধু অশীতিপর ঠাকুরমা,  তাঁকে ডেকে-ডেকেই আঙুলের ইশারায় বক দেখিয়ে যাচ্ছে সে, "ঠাম্মা বগা! ঠাম্মা বগা!"   অনেকধরনের অনেক গাছ সেখানে -- পাকুড়, গাব, ছাতিম, বট; পাতায় আর উপরের ডালপালার ছায়ায় বেশ খানিকটা ঢেকেও গেছে পাখিটা, তাই বৃদ্ধা কিছুতেই ঠাহর করতে পারছেন না, যদিও খুকুর হাতের ইশারায় তাঁর মনে হচ্ছে গাবগাছটার ডানদিকের বড় ডালটাতেই বসে আছে। তাই যখন এক মধ্যবয়স্কা প্রতিবেশিনী পুকুরঘাটে এলেন, ঠাকুরমা তাঁকে তখনি এই প্ৰশ্নটি করলেন।   ৪. রোকন, ব...

প্যালিনড্রোম​ ২

সমানুলোমবিলোম রচনাবলীর দ্বিতীয় পর্ব। ভাগ ১ 'সে' সর্বনামের পর একাধিক ক্রিয়াপদ বসিয়ে ছোট-ছোট সমানুলোমবিলোম বাক্য গড়া যায়:- সে আসে। সে ফাঁসে।  সে বসে।/সে  ব'সে। সে ভাসে  সে হাসে। আর কর্তা-ক্রিয়ার মধ্যে কয়েকটি শব্দ গুঁজে দিয়ে বাক্যগুলির কোন-কোনটি আরো লম্বাও করা যায়:- সে আর আসে? সে বনে বসে।/ সে বনে ব'সে। সে বটে বসে।/ সে  বটে ব'সে। ['বটে' অর্থাৎ বটগাছে। উপরের বসা-বিষয়ক চারটি বাক্যই বৃন্দাবনের কৃষ্ণকিশোর সম্পর্কেও বলা চলে, পেত্নি-শাকচুন্নি সম্পর্কেও বলা চলে।]  সে হাহা হাসে। ভাগ ২ বেনেটা শিশিটা দেবে, বেদে টা শিশিটা  নেবে। এই বাক্যটির অতিরিক্ত বিশেষত্ব এই যে, এটিকে ভেঙে কিংবা ওলটপালট ক'রে আরো অনেক সমানুলোমবিলোম বাক্য তৈরি করা যায়:- বেনেটা শিশি দেবে, বেদে  শিশি টা  নেবে। বেনে শিশিটা দেবে, বেদে টা শিশি  নেবে। বেনে শিশি দেবে, বেদে  শিশি  নেবে। দেবে  শিশি  বেনে ,  নেবে  শিশি   বেদে । বেনেটা দেবে, বেদেটা  নেবে। বেনে দেবে, বেদে  নেবে। দেবে  বেনে,  নেবে...