প্যালিনড্রোম​ ৫

১. ও মিতু, বাড়ি ছাড়িবা তুমিও?


"তুমি মিতু?" - এটি অনেক আগে থেকেই জানা, সম্ভবত দাদাঠাকুরের আবিষ্কার; হাল-আমলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কবি ফরিদউদ্দিন তাঁর 'কথা থাক' শীর্ষক সমানুলোমবিলোম-পঙ্ক্তিবিশিষ্ট কবিতার সংকলনেও 'তুমি'-'মিতু' ব্যবহার করেছেন। 

২. করক লহ, মরালবর্ণ বলরাম হলকরক!

এটি এ-বছরের রথযাত্রা উপলক্ষে রচিত। ব্যাখ্যা: 'মরাল'(অর্থাৎ রাজহংস)-ও শুভ্রবর্ণ, বলরামও শুভ্রবর্ণ -- তাই বলরাম 'মরালবর্ণ' (বিষ্ণু বা কৃষ্ণকেও তো মেঘবর্ণ বলে)। বলরামের প্রিয় অস্ত্র 'হল' বা লাঙ্গল -- যার মনে অন্য কিছু আছে সে যদি 'অন্যমনস্ক' হয়, তাহলে যাঁর 'কর'-এ অর্থাৎ হাতে হল থাকে, তাঁকে 'হলকরক' কেন বলা যাবে না (তাঁর হলধর, হলপাণি, হলায়ুধ প্রভৃতি নাম অভিধানেই পাওয়া যাবে)? আবার 'করক' শব্দের বহু অর্থের অন্যতম হল নারকোলের মালা, বিশেষত পানপাত্ররূপে ব্যবহৃত নারকোলের মালা। বলরামের সুরাসক্তির কথা অনেকেই জানেন, তাঁকে নারকোলের মালায় তাঁর প্রিয় পানীয় উৎসর্গ করা যেতেই পার। এই বাক্যে শ্বেতবর্ণ, হলধর, 'বড়প্রভু' বলভদ্রকে পানপাত্র গ্রহণের প্রার্থনা জানানো হচ্ছে!

৩. চাকা মাজা, জামা কাচা!

নতুন সাইকেল পেয়ে বুচকুনের আনন্দ আর ধরে না। সেই বর্ষামুখর শনিবার সকালেই একটা পাটভাঙা জামা প'রে, সাইকেল চ'ড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল সে। সারাদিন পথে-ঘাটে দৌরাত্ম্যি ক'রে বেড়িয়ে যখন বিকেলে বাড়ি ফিরল, মা মুখে কিছু বললেন না বটে; শুধু করুণ দৃষ্টিতে একবার তার জামাটার দিকে, একবার তার নতুন সাইকেলটার চাকার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন -- কাদা লেগে মলিন হয়ে গেছে প্রথমটির নিষ্কলঙ্ক শুভ্রতা, দ্বিতীয়টির ধাতব চাকচিক্য। যা কাজ হবার ওই নিঃশব্দ দৃষ্টিপাত আর দীর্ঘশ্বাসেই হল -- পরদিন খুব ভোরে উঠে নিজেই সাইকেলটা ঘষে-মেজে আর গতদিনের জামাটা কেচে পরিষ্কার করল ছেলে; তারপর জামাটা শুকোতে দিয়ে, একটা উপভোগ্য ক্লান্তির আবেশে মাকে গিয়ে সগর্বে বলল উপরের কথাটি।

পুনশ্চ: যাঁদের সুবোধ বালকের চেয়ে বখাটে ছেলেই বেশি ভাল লাগে, তাঁদের জন্য ওই একই উক্তির অন্যরকম প্রেক্ষাপট রচনা করতে সচেষ্ট হচ্ছি। বুচকুন বাড়ি ফিরে এসে, সাইকেলটা উঠোনের এককোণে অবহেলায় ফেলে দিয়ে, ময়লা জামাটা খুলে দিদির হাতে দিয়ে বলছে, জামাটা যেন দিদি মঙ্গলামাসিকে দিয়ে কাচিয়ে রাখে আর সাইকেলটাও তিনুকাকাকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে রাখে -- দিদিকে ছোটবেলা থেকেই সে তুইতোকারি করে।
_______________________________________________________________

৪.১. মেলানির শাড়ি-বইও নাকি কিনা ওই বড়িশার নিলামে?

৪.২. মেলানির শাড়িও নাকি কিনা ওড়িশার নিলামে?

৫. নিলামে বেচবে মেলানি?


'মেলানি'-- এই সেকেলে শব্দটির অর্থ হল বিদায় বা সাক্ষাৎকারের সময় (সাধারণত বিদায়ের সময়) কুটুম্ব, মাননীয় ব্যক্তি প্রভৃতিকে দেওয়া উপহার।

৪.১. বড়িশার এক বনেদি পরিবারের যখন আর কোন উত্তরাধিকারীই রইল না, তখন বহু স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিই নিলামে উঠল -- সেই নিলামে দেবনারায়ণ চৌধুরি বেশ কিছু শৌখিন জিনিস কিনেছিলেন। তারপর যখন তাঁর ছোট-বেয়াই রসিকচন্দ্র লাহা সস্ত্রীক প্রথমবার তাঁর আতিথ্যগ্রহণ করলেন, তখন তাঁদের ফিরে যাওয়ার সময় বেশকিছু দামি গহনা, শাড়ি আর দুষ্প্রাপ্য বই উপহার হিসাবে লাহা-বাবুর হাতে তুলে দিলেন চৌধুরি-মশাই। গহনাগুলি যে বড়িশার সেই বিখ্যাত নিলামেই কেনা, সে-কথা তিনি নিজের মুখেই জানিয়েছিলেন বেয়ানের পীড়াপীড়িতে, কিন্তু বাকি জিনিসগুলির উৎস নিয়ে সন্দেহের নিরসন হয়নি। তাই সে-খবর লাহা-গিন্নির ননদ আর জায়েদের কানে যাওয়ার পর তাঁদের মধ্যেই শুরু হল উপরি-উক্ত জল্পনাকল্পনা।

৪.২. গল্পটা থেকে 'দুষ্প্রাপ্য বই' বাদ দিতে হবে, আর নিলামটাকে বড়িশা থেকে ওড়িশায় স্থানান্তরিত করতে হবে।

৫. দেবনারায়ণ-বাবু লোকান্তরিত হয়েছেন বহু বছর, আর লাহাবাড়ির আর্থিক অবস্থাও আজ শোচনীয়। শেষপর্যন্ত রসিকবাবু যখন বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে বেয়াইয়ের স্মৃতিবিজড়িত সেই উপহারসম্ভার নিলাম করার কথাটা পাড়লেন গিন্নির কাছে -- তখনই গিন্নির মুখ থেকে প্রশ্নটি বেরোল বেদনা, ক্ষোভ, আর অবিশ্বাসের স্বরে।

Comments

Popular posts from this blog

প্যালিনড্রোম​ ৬

প্যালিনড্রোম​ ৭