প্যালিনড্রোম ৪
১. নূতন বরফে ছেয়ে গিয়েছে ফের বনতনূ।
'দেহ' অর্থে 'তনু', 'তনূ' দুটিই হয়। বন এখানে মানবরূপে কল্পিত, যার দেহ সদ্যঃপতিত তুষারে পুনরায় সমাচ্ছন্ন হয়েছে।
২. কবে ল' তাহার মেয়ে বয়েমের হাতা লবেক?
এক সেকেলে মহিলার আরেক মহিলাকে করা প্রশ্ন -- তাই সম্বোধনে 'ল'' ব্যবহৃত হয়েছে, আর 'নেবে'-র জায়গায় 'লবেক'।
৩.১. লইড়া ছা রোগের গেরো ছাড়াইল।
'লইড়া' 'লড়িয়া'-র আঞ্চলিক রূপভেদ, 'ছা' মানে পুত্র, আর 'গেরো' শব্দের এক অর্থ 'গিঁট' (এই গেরো এসেছে ফারসি 'গিরহ্' থেকে), অন্য অর্থ 'বিপদ' (এই গেরোর উৎস সংস্কৃত 'গ্রহ' বলে মনে করা হয়) -- এই দুই অর্থ এখানে মিলেমিশে গেছে। কোন ব্যক্তি জানাচ্ছেন যে, তাঁর ডাক্তার-পুত্র বহু সংগ্রাম ও পরিশ্রমের পর কোন এক ভয়াবহ, জটিল ব্যাধির কবল থেকে এক বা একাধিক রোগীকে মুক্ত করেছেন।
পুনশ্চ: অনেকে হয়ত বলবেন, যেহেতু 'লইড়া'-র 'লই'-টাকে ভেঙে-ভেঙে 'লো-ই' এভাবে উচ্চারণ করা হয় না, 'লৈ' - এইভাবে যৌগিকস্বর (diphthong) দিয়েই উচ্চারণ করা হয়, এবং 'ছাড়াইল'-র 'আই' সম্পর্কেও ওই একই কথা বলা চলে, সেহেতু উপরের বাক্যটি সম্যকরূপে সমানুলোম নয় (লই-ড়া-ছা-রো-গে-র-গে-রো-ছা-ড়া ই-ল)। তাঁদের জন্য রইল এই বাক্যটিরই ঈষৎ পরিবর্তিত রূপ:
৩.২. লইড়া ছা রোগের গেরো ছাড়ালই।
অর্থাৎ সুনিশ্চিতভাবে ছাড়াল।
৪. পদ্য মন খুলিয়া লিখুন মদ্যপ!
এই বাক্য উচ্চারিত হওয়ার সম্ভাব্য পটভূমিকা:
অঙ্কুর এমনিতে খুবই ভাল ছেলে -- স্বভাব-চরিত্র ভাল; বরাবরই লেখাপড়ায় ভাল; বছরখানেক হল ভাল একটা চাকরিও পেয়েছে; বছরতিনেক ধরে প্রেম করছিল প্রাক্তন-সহপাঠিনী অঙ্কিতার সঙ্গে। অঙ্কিতাও খুব ভাল মেয়ে -- সজাতীয়া অথচ ভিন্নগোত্ৰীয়া, সুশিক্ষিতা অথচ গৃহকর্মনিপুণা, আধুনিকা অথচ ঐতিহ্যমনস্কা, সুশ্রীও বটে। আর তাদের সম্পর্কে দুই পরিবারের সম্মতিও ছিল।
কিন্তু দিন-দশেক আগে কি যে হল -- অঙ্কুর-অঙ্কিতায় ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। হাতে পয়সা আর মনে ব্যথা থাকলে কাঁচা বয়েসের ছেলেরা যে পথে যায়, সেই শৌণ্ডিকাগারের(bar-এর) পথই ধরল অঙ্কুর। পরপর পাঁচদিন সন্ধ্যা নামতে-না-নামতেই তাকে দেখা গেল একটি জনপ্রিয় নৈশ-প্রমোদশালার এক নির্দিষ্ট আসনে -- অত্যধিক মদ্যপান করলেও কারো সঙ্গে অভব্যতা সে করে না, শুধু আপনমনে হাউহাউ করে হাপুসনয়নে কেঁদে যায়। শুণ্ডাপরিবেষক (bartender), অবাঞ্ছিতোচ্ছেত্তা (bouncer), অন্যান্য খদ্দের সকলেরই কিছুটা অস্বস্তি হয় ঠিকই, কিন্তু এই ব্যর্থ তরুণ প্রেমিকের প্রতি অনুকম্পাও হয়, তাই কিছু বলেন-টলেন না (একজন শুণ্ডাপরিবেষককে তো অঙ্কুর নিজেই নিজের দুঃখের কথা শুনিয়েছে, বাকিরাও জেনে গেছেন কানাঘুষোয়)।
কিন্তু পঞ্চম সন্ধ্যায় সে যখন সে আকণ্ঠ পান ক'রে, কাঁদতে কাঁদতে অঙ্কিতার দেওয়া সেই আকাশি রঙের বড় প্রিয় জামাটাতে বমি করে ফেলল, বুঝল যে নিজের রাশটা এবার নিজেকেই একটু টানতে হচ্ছে। তাই ষষ্ঠ সন্ধ্যা থেকে সে সঙ্গে একটা গান-কবিতা লেখার খাতা আনতে শুরু করল -- সেই একই আসনে বসে, মনের বেদনা নানা ছন্দে খাতায় নামায়, আর কান্নার বেগ যখন ভিতর থেকে পাঁজরটাকে ঠেলে সারা শরীর কাঁপিয়ে দিয়ে যায়, একটু ফুঁপিয়ে চোখ মুছে নিয়ে আবার লেখায় মন দেয়। এই ক'রে তার কান্নাকাটির বহরও কমতে থাকে, মদ্যপানের মাত্রাও কমতে থাকে, আর পকেট-নিঃসৃত মদ্যমূল্য ও পারিতোষিকের পরিমাণটিও কমতে থাকে।
শেষোক্ত কারণটির জন্য একজন অর্থগৃধ্নু শুণ্ডাপরিবেষক যখন সামান্য উষ্মা প্রকাশ করতে শুরু করল, তখনই তার মানবদরদি (এবং, প্রকৃতপক্ষে, রোজকার দীর্ঘমেয়াদি মড়াকান্নায় তলে-তলে তিতিবিরক্ত) সহকর্মী তার বেশি কিছু বলা বা করা আটকানোর উদ্দেশ্যেই বলে উঠল উপরের বাক্যটি -- অর্থাৎ যিনি মত্তাবস্থায় আছেন, সেই অঙ্কুরবাবুকে অন্তরের সব ভাব-ভাষা অবাধে ঢেলে ছন্দোবদ্ধ কবিতা লিপিবদ্ধ করতে দেওয়া হোক।
কিন্তু দিন-দশেক আগে কি যে হল -- অঙ্কুর-অঙ্কিতায় ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। হাতে পয়সা আর মনে ব্যথা থাকলে কাঁচা বয়েসের ছেলেরা যে পথে যায়, সেই শৌণ্ডিকাগারের(bar-এর) পথই ধরল অঙ্কুর। পরপর পাঁচদিন সন্ধ্যা নামতে-না-নামতেই তাকে দেখা গেল একটি জনপ্রিয় নৈশ-প্রমোদশালার এক নির্দিষ্ট আসনে -- অত্যধিক মদ্যপান করলেও কারো সঙ্গে অভব্যতা সে করে না, শুধু আপনমনে হাউহাউ করে হাপুসনয়নে কেঁদে যায়। শুণ্ডাপরিবেষক (bartender), অবাঞ্ছিতোচ্ছেত্তা (bouncer),
কিন্তু পঞ্চম সন্ধ্যায় সে যখন সে আকণ্ঠ পান ক'রে, কাঁদতে কাঁদতে অঙ্কিতার দেওয়া সেই আকাশি রঙের বড় প্রিয় জামাটাতে বমি করে ফেলল, বুঝল যে নিজের রাশটা এবার নিজেকেই একটু টানতে হচ্ছে। তাই ষষ্ঠ সন্ধ্যা থেকে সে সঙ্গে একটা গান-কবিতা লেখার খাতা আনতে শুরু করল -- সেই একই আসনে বসে, মনের বেদনা নানা ছন্দে খাতায় নামায়, আর কান্নার বেগ যখন ভিতর থেকে পাঁজরটাকে ঠেলে সারা শরীর কাঁপিয়ে দিয়ে যায়, একটু ফুঁপিয়ে চোখ মুছে নিয়ে আবার লেখায় মন দেয়। এই ক'রে তার কান্নাকাটির বহরও কমতে থাকে, মদ্যপানের মাত্রাও কমতে থাকে, আর পকেট-নিঃসৃত মদ্যমূল্য ও পারিতোষিকের পরিমাণটিও কমতে থাকে।
শেষোক্ত কারণটির জন্য একজন অর্থগৃধ্নু শুণ্ডাপরিবেষক যখন সামান্য উষ্মা প্রকাশ করতে শুরু করল, তখনই তার মানবদরদি (এবং, প্রকৃতপক্ষে, রোজকার দীর্ঘমেয়াদি মড়াকান্নায় তলে-তলে তিতিবিরক্ত) সহকর্মী তার বেশি কিছু বলা বা করা আটকানোর উদ্দেশ্যেই বলে উঠল উপরের বাক্যটি -- অর্থাৎ যিনি মত্তাবস্থায় আছেন, সেই অঙ্কুরবাবুকে অন্তরের সব ভাব-ভাষা অবাধে ঢেলে ছন্দোবদ্ধ কবিতা লিপিবদ্ধ করতে দেওয়া হোক।
৫. খেলে মনা নাম লেখে।
অমিয়বাবুর বড়ছেলে মনোজিতের ছোটবেলা থেকেই দুটি নেশা -- ক্রিকেটের আর পয়সার। দুটিকেই ঈশ্বরের আশীর্বাদ ব'লে ধ'রে নিয়ে তিনিও তাঁর আদরের 'মনা'কে যথেষ্ট উৎসাহ দেন ক্রিকেট খেলতে আর আয়ের নিত্যনতুন পন্থা উদ্ভাবন করতে। সেদিন মনা টিভির একটা অনুষ্ঠান দেখে জানতে পারল যে, বড়-বড় খেলোয়াড়ের নাম-সই-করা ব্যবহৃত ক্রীড়োপকরণ চড়া দামে নিলামে বিকোয়। সেই থেকে যেই তার বল, ব্যাট, প্যাড প্রভৃতি বহুব্যবহারে অকেজো হয়ে প'ড়ে, ওমনি সে খেলা-শেষে তাতে স্পষ্টাক্ষরে স্বাক্ষর ক'রে সেটা একটা নির্দিষ্ট তোরঙ্গে তুলে রাখে -- কোনদিন যদি ক্রীড়াজগতে প্রতিপত্তি অর্জন করতে পারে, তাহলে সেগুলির পণ্যায়ন করবে -- এই আশায়।৬. নানক কন, "না।"
জাত-ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ কি করা উচিত? নানা দেবদেবীর পূজার্চনার অথবা জটিল ধর্মীয় রীতিরেওয়াজের কি কোন প্রয়োজন আছে? এই সকল প্রশ্নের উত্তরে গুরু নানক কি বলেন?
Comments
Post a Comment